সবাই মিলে, সবার পাশে – আমাদের মির্জানগর

“সুবার বাজার উপস্বাস্থ্য কমপ্লেক্স” মির্জানগর ইউনিয়নের মানুষের একটি ভরসার নাম। সমগ্র ইউনিয়নের মানুষ এখান থেকে সেবা নিয়ে থাকেন। ২০১৯ সালের জুন মাস থেকে এখানে নিয়মিতভাবে গর্ববতী মহিলাদের ডেলিভারী কার্যক্রম চালু আছে। এখানে প্রতিমাসে গড়ে ২০ জনের অধিক প্রসব করানো হয় এবং এই সংখ্যাটা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান যুগে যেখানে বিভিন্ন হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় সিজার এর অভিযোগ আসছে, সেখানে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ইউনিয়নবাসীর নিকট ডেলিভারীর একটি বিশ্বস্ত নামে পরিণত হয়েছে।

এই ডেলিভারী সেবা দিতে গিয়ে মাঝে মাঝে প্রসূতি মা ও বাচ্চার ক্ষেত্রে অনেক ক্রিটিক্যাল মুহূর্তও মোকাবিলা করতে হয় স্বাস্থ্যকমীদের। এমনই একটি ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে সুবার উপস্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর বর্তমান মিডওয়াইফ রহিমা আক্তার জানান, ‘‘অনেক সময় নবজাতকের অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে যা আমি মুখে শ্বাস প্রদানের মাধ্যমেও সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাজটিতে ঝুঁকি থেকে যায়। নবজাতক ও গর্ববতীর অক্সিজেনের সমস্যা ছাড়াও, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, নবজাতকের হার্টবিট পর্যবেক্ষন করাসহ এজাতীয় বিভিন্ন সমস্যায় সম্মুখীন হতে হয় আমাদের।”

ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর দূরত্ব প্রায় ৮/৯ কিলোমিটার, যার ফলে অনেক সময় জরুরী মুহূর্তগুলো সুবার বাজার উপস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে মোকাবেলা করতে হয়। গর্ববতী ছাড়াও অনেক শ্বাসকষ্টজনিত রোগী, মুমূর্ষু রোগীর সাময়িক সেবাও বিভিন্ন সময় জরুরী হয়ে পড়ে।

এসব বিষয় বিবেচনায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ইউনিয়নের সবার সহযোগিতার মাধ্যমে সুবার বাজার উপস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নবজাতক ও মায়ের জটিল সমস্যা ও অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতিজনিত সমস্যায় ব্যবহারের জন্য একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও একটি ফ্লোমিটার, নবজাতকের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা মোকাবেলার জন্য একটি নেবুলাইজার ও নবজাতকের হার্টবিট পর্যবেক্ষনের জন্য একটি ডপলার মেশিন সরবরাহ করার। সবগুলো সরঞ্জামের ক্রয়মুল্য বাবদ খরচ হতে পারে আনুমানিক ৩০-৩৫ হাজার টাকার মতো।

সেই লক্ষ্যে “আমাদের মির্জানগর” ফেসবুক গ্রুপের উদ্যোগে উক্ত তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে ২৭ জুন, ২০২০ তারিখে তিনদিনের জন্য (৩০ জুন, ২০২০) একটি ইভেন্ট আহ্বান করি। কিন্তু, সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় মাত্র ১৬ ঘন্টায় আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অতিরিক্ত আরও ৯ হাজার টাকার মতো সংগ্রহ হয়ে টাকার অংকটি দাড়ায় ৩৯,৭৭১/- তে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, Master Air Express Co., Ltd. এর সম্মানিত ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পূর্ব সাহেব নগর নিবাসী জনাব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে ২০,০০০/- টাকা অনুদান প্রদান। এমতাবস্থায়, আমরা তাৎক্ষণিকভবে (২৮ জুন, ২০২০ দুপুর ২:৩০মি.) আমাদের অনুদান সংগ্রহের কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করে দেই।

টাকার পরিমাণ কিছু বাড়তি হওয়ায় আমরা আমাদের ইভেন্টে ঘোষণাকৃত সরঞ্জামের চেয়েও আরও বাড়তি কিছু সরঞ্জাম সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিই। গত ০৪ জুলাই, ২০২০ তারিখে আমাদের ক্রয়কৃত বাড়তি সরঞ্জামসহ সকল মেডিক্যাল ইক্যুপমেন্ট হস্তান্তরের পরও আমাদের হাতে কিছু টাকা অবশিষ্ট থেকে যায়।

এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ আরও একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন “অক্সিজেন একবার শেষ হয়ে গেলে, তা রিফিল করতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যায়।” যেহেতু আমাদের হাতে কিছু টাকা রয়ে যায়, তাই উক্ত সময়েও সেবা প্রদানে যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে তাই আমরা আরও কিছু টাকা সংগ্রহের মাধ্যমে আরেকটি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদানের সিদ্ধান্ত নিই। মির্জানগর ইউনিয়নের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব নুরুজ্জামান ভুট্টু ও আমাদের মির্জানগর গ্রুপের এডমিন প্যানেলের অন্যতম সদস্য নুরুল আবসার এর শ্রদ্ধেয় বড় ভাই জনাব নুরুল আমিন সাহেব উক্ত টাকার সাথে আরও একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য ১২,৭৫০/- টাকা অনুদান প্রদান করতে আমরা গত ০৫ জুলাই, ২০২০ তারিখে আরও একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার হস্তান্তর করি।

সরঞ্জাম হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন, পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ডাঃ আবদুল খালেক মামুন স্যার (ইউএইচ & এফপিও), ডাঃ ইনদ্রজিত ঘোষ কনক (আরএমও), মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদের স্বনামধন্য চেয়ারম্যান জনাব নুরুজ্জামান ভুট্টু, সুবার বাজার উপস্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মিডওয়াইফ রহিমা আক্তার, মোঃ ইসমাইল হোসেন (প্রধান হিসাব সহকারী), নুরুল করিম (এফপিআই) সহ আরও অনেকেই।

উল্লেখ্য যে, ১ম বারের চেয়ে ২য় বারের সরঞ্জাম কিছুটা ডিসকাউন্টে পাওয়ায় আমাদের হাতে ৩,০০১/- টাকা থেকে যায়, যা দাতার অনুমতি ক্রমে পরবর্তী ইভেন্টে এডজাস্ট করা হবে।

 

এডমিন প্যানেল-

পোস্টটি শেয়ার করুন