মানুষ কী নিয়ে বাঁচে – লিও টলস্টয়

সাত

 

সাইমন মিখাইলকে বলল :

“কাজটা যখন নিয়েছি, দেখোঁ যেন কোনোরকম গোলমালে না পড়ি। চামড়াটা দামি, ভদ্রলোকও বদমেজাজি। দেখতে হবে যাতে কোনো ভুল না হয়। তোমার হাতও এখন আমার হাতের চেয়ে পাকা। মাপজোকগুলো নিয়ে চামড়াটা তুমিই কাটো, আমি বরং উপরের চামড়াটা সেলাই করব।”

সেই কথামতো মিখাইল ভদ্রলোকের চামড়াটা নিয়ে টেবিলের উপরে পাতল। দুই ভাজ করে কাচি নিয়ে শুরু করল কাটতে।

ঘরে ঢুকল মাত্রোনা। মিখাইলের চামড়া কাটা দেখে সে অবাক হয়ে গেল। মুচির কাজ মাত্রোনাও ভালো বোঝে। সে দেখল, মিখাইল চামড়াটা বুটের মতো করে না-কেটে গোল-গোল টুকরা করে কাটছে। কিছু বলতে গিয়েও মাত্রোনা ভাবল :“হয়তো ভদ্রলোকদের বুট কেমন করে বানায় আমি জানি না। মিখাইল নিশ্চয় আমার থেকে ভালো জানে।”

কাটা শেষ করে মিখাইল সুতো নিয়ে সেলাই করতে শুরু করল।

মাত্রোনা আবারও অবাক, কিন্তু এবারও সে কিছু বলল না। মিখাইল সেলাই করেই চলল।

বেলা দুপুর হলে সাইমন উঠে দাড়িয়ে চোখ ফেরাল। এ কী! ভদ্রলোকের চামড়াটা দিয়ে মিখাইল যে একজোড়া চটি তৈরি করে ফেলেছে।

সাইমন আর্তনাদ করে উঠল। ভাবল :“আজ একবছর মিখাইল এখানে আছে, কোনোদিন একটা ভুল করেনি, আজ সে এমন মারাত্মক ভুল কেমন করে করল ? ভদ্রলোক অর্ডার দিয়ে গেলেন উচু বুটের, আর ও তৈরি করে বসেছে চটিজুতো! ভদ্রলোককে আমি মুখ দেখাব কেমন করে?

সে মিখাইলকে বলল : “এ তুমি কী করেছ ভাই? ভদ্রলোক যে অর্ডার দিয়ে গেলেন বুটের?”

সাইমন সবে কথা বলতে আরম্ভ করেছে, এমন সময় দরজার কড়া নড়ে উঠল। সাইমন ও মিখাইল জানালা দিয়ে তাকাল। ঘোড়ায় চড়ে একটি লোক এসেছে।

তারা দরজা খুলে দিল। সেই ভদ্রলোকের একটি চাকর ঢুকল ভিতরে।

“কর্ত্রী আমাকে পাঠালেন সেই বুটের ব্যাপারে।”

“বুটের আবার কী হল?”

“কী হলই বটে! আমার মনিবের আর বুটের দরকার নেই। তিনি মারা গেছেন।”

“বলো কী!”

“এখান থেকে তিনি বাড়ি ফেরেননি, স্লেজের মধ্যেই মারা গেছেন। আমরা যখন বাড়ি পৌছলাম, সকলে তাকে ধরাধরি করে নামাতে এল; কিন্তু তিনি একটা বস্তার মতো গড়িয়ে পড়লেন। তাকে স্রেজ থেকে নামিয়ে আনতে না-আনতেই কর্ত্রী আমাকে ডেকে বললেন : “মুচিকে বলবে, একজন ভদ্রলোক চামড়া জমা দিয়ে একজোড়া বুটের অর্ডার দিয়েছিলেন, সে বুট আর দরকার নেই, বরং যত শীঘ্র সম্ভব সেই চামড়া দিয়ে শবাধারের জন্য একজোড়া চটি যেন তৈরি করে দেয়। যতক্ষণ তৈরি না হয় অপেক্ষা করে চটি নিয়ে তবে আসবে। তাই আমি এসেছি।”

মিখাইল টেবিল থেকে টুকরো চামড়াগুলো নিয়ে গোল পাকাল, তৈরি-চটিজোড়া একসঙ্গে বেঁধে অ্যাপ্রন দিয়ে ভালো করে মুছে সেগুলি দিয়ে দিল ছেলেটাকে। ছেলেটা হাত পেতে চটিজোড়া নিল।

“বিদায়, মশায়রা। শুভদিন।”

পোস্টটি শেয়ার করুন