মানুষ কী নিয়ে বাঁচে – লিও টলস্টয়
পাঁচ
পরদিন সকালে সাইমনের ঘুম ভাঙল। ছেলেমেয়েরা তখনও ঘুমুচ্ছে। বউ গেছে প্রতিবেশীর বাড়ি রুটি ধার করতে। পুরানো ট্রাউজার আর শার্ট পরে আগন্তুক উপরের দিকে তাকিয়ে বেঞ্চিতে বসে আছে। তার মুখখানি আজ কালকের চাইতেও উজ্জ্বল।
সাইমন বলল, “দেখ ভাই, পেট চায় খাবার, আর শরীর চায় জামা-কাপড়। প্রত্যেককেই উপার্জন করতে হবে। তুমি কী কাজ জানো?”
“আমি কিছুই জানি না।”
সাইমন বিস্মিত হয়ে বলল, “ইচ্ছা থাকলে মানুষ সবকিছু শিখতে পারে।”
“মানুষ কাজ করে; আমিও কাজ করব।”
“তোমার নাম কী?”
“মিখাইল।”
“দেখ মিখাইল, নিজের সম্পর্কে তুমি কিছুই বলতে চাও না, সে তোমার খুশি। কিন্তু উপার্জন তো তোমাকে করতেই হবে। আমি যা কাজ দিই তা করবে। তাহলে আমি তোমাকে খেতে দেব।”
“ঈশ্বর তোমাকে রক্ষা করুন। নিশ্চয়ই শিখব। বলে দাও কী করতে হবে।”
সাইমন দেখিয়ে দিল কেমন করে সেলাই করতে হয়। মিখাইল বেশ তাড়াতাড়ি সেটা রপ্ত করে নিল। মোটা সুতো দিয়ে কী করে সেলাই করতে হয় মিখাইল শিখে ফেলল তাও।
সাইমন যা-কিছু দেখায় তাই সে শিখে ফেলে। তিনদিনের দিন থেকে সে এমনভাবে সেলাইয়ের কাজ করতে লাগল যেন সারাজীবন সে সেলাই করে আসছে। তার কাজে কখনও ভূল হয় না। সে খায়ও কম। শুধু মাঝে মাঝে একটু বিশ্রাম নেয়, আর সেই সময়টা আকাশের দিকে নীরবে তাকিয়ে থাকে। কখনও সে ঘর ছেড়ে বাইরে যায় না; একটি বাজে কথা বলে না; হাসিঠাট্টাও করে না।
প্রথমদিন সন্ধ্যায় মাত্রোনা যখন তার জন্যে খাবার তৈরি করছিল কেবলমাত্র সেই দিন তারা তাকে একবার হাসতে দেখেছিল।