যদ্যপি আমার গুরু – আহমদ ছফা
তেরো
এবার আমরা তিনজন একসঙ্গে গেলাম। ইতিহাসের শিক্ষক ড. আহমেদ কামাল এবং অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। আমি যখন দরোজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম, দেখি স্যার রেহমান সোবহান সাহেবের বেগম সালমা রেহমানের সঙ্গে কথা বলছেন। আমাকে যখন চিনতে পারলেন, জিগ্গেস করলেন, লগে আরও কেউ আছে নিহি?
আমি জিল্লুর এবং কামালকে দেখিয়ে বললাম, এই দুজন। স্যারের কপালে একটা ভাঁজ পড়লো। বুঝতে পারলাম ঈষৎ বিরক্ত হয়েছেন। স্যার বলেই ফেললেন, আমি কিন্তু বাবা বেশি সময় দিতে পারুম না। সিঙ্গাপুর থেইক্যা আমার ভাইজিটা আইবার কথা।
আমরা চলে আসব কি না চিন্তা করছিলাম। স্যার জিগ্গেস করলেন, আইজ প্রেসিডেন্টের বক্তৃতাটা পড়ছেন নিহি? কামাল এবং জিল্লুর অজ্ঞতা প্রকাশ করলেন।
আমি বললাম, সাহাবুদ্দিন সাহেব এশিয়াটিক সোসাইটিতে ড. ইব্রাহিমের স্মরণসভায় একটা বক্তৃতা দিয়েছেন।
স্যার বললেন, আমার যাওনের ইচ্ছা আছিল না। ড. আহমদ হোসেন দানির লগে দেখা অইব হের লাইগ্যা গেলাম। ড. দানি আমাগো এই অঞ্চলের ইতিহাস এত জানেন আমি তিন জন্মেও অতি জানবার পারুম না।
আমি জিগ্গেস করলাম, তিনি কি বাঙালি?
স্যার বললেন, দানি বাঙালি না। তবে খুব এফিসিয়েন্ট স্কলার।
আমি জানতে চাইলাম, মানুষ হিসেবে কেমন?
স্যার বললেন, ওই মন রাখা কথা বলার অভ্যাস আছে।
স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, একটা কোটেশন আপনে লেইখ্যা রাখেন, সুযোগমতো ব্যবহার করবার পারবেন, দেয়ার আর পিরিয়ডস ইন হিস্টোরি হোয়েন ক্রলিং ইজ দ্যা বেষ্ট মীনস অব কম্যুনিকেশন। এই হামাগুড়ি দেওনের পাল্লায় ইন্টেলেকচুয়ালেরা সকলের আগে থাকে। এখন বাংলাদেশের সেই অবস্থা। সকলে কইতাছে খুব ডেভলপমেন্ট অইতাছে। কাইল পানি আছিল না, আইজ ইলেকট্রিসিটি নাই, পরশুদিন গাড়িঘোড়া নাই, এইগুলা অইল সিম্পটম অভ ডেভলপমেন্ট, শুইন্যা শুইন্যা কান পইচা গেছে।
বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন সাহেবের ইব্রাহিম স্মারক বক্তৃতার কথা কেনো উল্লেখ করলেন, আমার মনে কারণটা ঝিলিক দিয়ে উঠল। নিশ্চয়ই সাহাবুদ্দিন সাহেব ইব্রাহিমকে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা-ট্রস্টা এইরকম কিছু বলেছেন। কথাটা স্যারের মনে লেগেছে। আমার ধারণা স্বাধীন বাংলাদেশের কনসেপ্টটা বিকশিত করার পেছনে স্যারের যে ভূমিকা তার সঙ্গে অন্য কারও তুলনা করা যাবে না। স্যারের অবদান সকলে অস্বীকার করছেন, মুখে কিছু না বললেও স্যার অন্তরে আহত হয়েছেন। আমার ধারণা স্যারের বিরক্ত হওয়ার এটাই কারণ।
স্যার সময় বেঁধে দিয়েছেন। আমরা চলে আসার কথা চিন্তা করছিলাম। স্যার টেবিল থেকে একটা বই টেনে নিয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। এইডা কী কাইবার পারেন? স্যারই বললেন, রামকৃষ্ণের কথামৃত। কথাবার্তা যেসব কইছেন এক্কেরে খাঁটি। কোনো খাদ আছিল না। মানুষ অ্যাসেস করার একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছিল। বিদ্যাসাগর, দেবেন ঠাকুর, কেশব সেন, বঙ্কিম, গিরিশ ঘোষ সকলের সম্পর্কেই রামকৃষ্ণের বিশেষ বিশেষ মন্তব্য আছে। সেগুলা অনেকটাই সত্যের কাছাকাছি। তিনি ত দেবেন ঠাকুর সম্পর্কে কইছেনই যে–মানুষ চৌদ্দটা পোলা মাইয়া জন্ম দিছেন, হে সাধনা করবার সময় পাইল কখন!
আমরা হা হা করে হাসলাম। স্যার বঙ্কিমে চলে এলেন। বঙ্কিমের একটা ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স আছিল। তার পড়াশোনা অইছিল মুসলমানের টাকায়। মুহসিন ফান্ডের টাকায় তিনি লেখাপড়া করছিলেন। মুসলমানের বিরুদ্ধে কলম ধইরা সেই ঋণ শোধ করছিলেন। তারপর স্যার বললেন, রামকৃষ্ণ বঙ্কিমরে দেইখ্যা কইছিলেন, তোমার মনে এত অহঙ্কার কেন?
আমি বললাম, বিদ্যাসাগরের সঙ্গেও বঙ্কিমের সাক্ষাতের এরকম একটি গল্প চালু আছে। বিদ্যাসাগর বিএ-তে বাংলার প্রশ্নপত্র তৈরি করেছিলেন এবং প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছিলো, সে কারণে বঙ্কিম কম নম্বর পেয়েছিলেন। তাঁকে গ্রেস মার্কস দিয়ে বিএ পাশ করতে হয়েছিল। একারণেই তিনি বিদ্যাসাগরের ওপর খাপ্পা ছিলেন।
স্যার বললেন, বিদ্যাসাগরের বিরুদ্ধে এরকম একটা নালিশ হরপ্রসাদ শাস্ত্রীও করেছিলেন। শাস্ত্রী মশায় বলেছিলেন, বিদ্যাসাগর সংস্কৃত বহুল বাংলা লিখে বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের দুহিতা প্রমাণ করবার চেষ্টা করছিলেন। স্যার বললেন, বঙ্কিমের বাবাও ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি বহরমপুরে ছিলেন এবং এই জেলার সম্পর্কে যা লেখছেন আমি পড়ছি। ইংরেজ আসার পরে এই দেশের রেভিনিউ সিস্টেমের মধ্যে যে চেঞ্জ আইছে সেইটা শুধু বঙ্কিম না, কেউ বুঝবার পারে নাই। সায়েন্টিস্ট নিউটন আছিলেন মিন্ট মাস্টার। সে সময়টা আওরঙ্গজেবের আমল, ইন্ডিয়ার মানিটারি সিস্টেম যে-কোনো ইউরোপীয় দেশের চাইতে অনেক বেশি সুপিরিয়র আছিল।
স্যার যখন কথা বলতে আরম্ভ করেন, একসঙ্গে অনেক কথাই বলে ফেলেন। শুধু একটা সূত্র প্রয়োজন। আমরা যদি ধরিয়ে না দিই নিজেই সূত্র ঠিক করে নেন।
কথাবার্তা একসময়ে বদরুদ্দীন উমর সাহেবদের পূর্বপুরুষ নওয়াব আবদুল জব্বারে এসে ঠেকলো। আবদুল জব্বার এবং তার এক ভাই, দুইজনেই আছিলেন সদরঅলা। একবার লর্ড ক্যানিং তাগো বাড়িতে বেড়াইতে গেছিলেন। তিনি নওয়াব আবদুল জব্বারের কথা প্রসঙ্গে কইছিলেন তোমাদের মধ্যে এক্কেরে কৃতজ্ঞতা নাই। নওয়াব আবদুল জব্বার জবাব দিছিলেন, আমরা অকৃতজ্ঞ বইলাই ত তোমরা আমাগো উপর রাজত্ব করছ।
উমর সাহেবদের পরিবারের প্রসঙ্গ যখন উঠল আমি আবুল হাশিম সাহেবের বাবা মৌলবি আবুল কাশেম সাহেবের কথা তুললাম। বললাম, নানা জায়গায় পড়েছিম আবুল কাশেম সাহেব ফজলুল হক সাহেবকে সব সময়ে দুষ্ট গ্রহের মতো আড়াল করে রাখতেন। উমর সাহেব একসময়ে জানিয়েছিলেন, তার পিতামহের সঙ্গে লর্ড রীডিং-এর গলায়-গলায় ভাব ছিল।
স্যার বললেন, মৌলবি আবুল কাশেম সুবিধার মানুষ আছিল না। তিনি সবসময় সত্য কথা বলতেন, এই কথা তার অতি শত্রুও বলতে পারবে না। কিন্তু ইংরেজিটা বলতেন চমৎকার। তিনি সবসময়ে খুব মিহি ধুতি এবং পাঞ্জাবি পরতেন। আর মাথায় একটা কিস্তি টুপি। ডায়েসে খাড়াইয়া যখন কথা বলতেন, একেকটা ওয়ার্ড মুক্তার দানার মতো ঝইর্যা পড়ত।
স্যার যেহেতু আমাদের শুরুতে বলে দিয়েছেন তিনি অধিক সময় দিতে পারবে না, আমরা কেউ কোনো প্রশ্ন করলাম না। অপেক্ষা করছিলাম, তিনি একটা জায়গায় থামবেন, তখন আমরা চলে আসবো। লর্ড রীডিং-এর সূত্র ধরেই তিনি বক্তব্য বলতে থাকলেন। লর্ড রিডিং-এর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র তার একটা বায়োগ্রাফি প্রকাশ করেন। তিনি যতোদিন ইন্ডিয়াতে ছিলেন প্রতি সপ্তাহে তাঁর পুত্রের কাছে একটা কইর্যা চিঠি লিখতেন। ভারতের যেসকল ডিগনিটরির লগে তার দেখা অইত, তাগো সম্পর্কে লর্ড রীডিং তার প্রাইমারি ধারণাটা প্রকাশ করতেন। মিঃ গান্ধীর লগে যখন রীডিং-এর লগে দেখা অইছে, লর্ড রীডিং তার সম্পর্কে লিখছেন, এই লোকের সঙ্গে আমাগো ব্যবসা জমবে ভালা। এইভাবে যত ইন্ডিয়ান লিডারের লগে দেখা আইছে সকলকে একটা ক্যাটিগরিতে ফেলছেন। কিন্তু মিঃ জিন্নাহর সঙ্গে তাঁর দেখা হওনের পরের চিঠিতে এক্কেরে সুর পাল্টাইয়া গেল। এই লোক এক্কেরে বেয়ারা। উই উইল হ্যাভ ট্রাবল ইন হ্যান্ডলিং মিঃ জিন্নাহ।
আমি বললাম, আপনি সবসময় মিঃ জিন্নাহকে বেশি বেশি নাম্বার দিচ্ছেন। জিন্নাহ সাহেব ওবস্টিনেট ছিলেন সত্য, কিন্তু আপনি তাঁর প্রতি দুর্বল।
স্যার হাসলেন, আমি ত আর বানাইয়া বলবার লাগছি না।
স্যার এই পর্যায়ে শারীরিক দুর্বলতার কথা বললেন। তারপর বললেন, এই শরীর নিয়া গোপালগঞ্জ যাইতে অইব। সকলে আমারে ধইর্যা বইল কাজী মোতাহার হোসেন দাবা টুর্নামেন্টে আমার থাকন লাগব। আমি মত দিছিলাম। এখন কইতাছে হেই টুর্নামেন্ট অইব গোপালগঞ্জে। লোকে মনে করে কাজী সাহেবের লগে আমার পরিচয় দাবার মাধ্যমে। আসলে পরিচয় অইছিল নজরুল ইসলামের গানের অনুষ্ঠানে। তখন আমি ক্লাস নাইনের ছাত্র। থাকি গেণ্ডারিয়ায়। কলিকাতার থেইক্যা ঢাকা মেইল আইতে একটু দেরি অইছিল। সকলে নজরুলরে মুসলিম সাহিত্য সমাজের অফিসে নিয়া তুললেন। নজরুল কইলেন উমর ফারুকের উপর কবিতা পড়ার কথা আছিল। লিখতে পারি নাই, অন্য কবিতা পড়ব। সাহিত্য সমাজের অফিস আছিল এখনকার মেডিকেল কলেজের দক্ষিণ গেটের দোতলায়। কথাবার্তা যা নজরুল একাই কইলেন। গান গাইতাছেন, নইলে কবিতা পড়তাছেন। একটু ক্লান্ত অইলে অন্য একজনরে হারমোনিয়ামের সামনে বসাইয়া দিয়া কইছেন, দেখি তুমি একটু গান কর। তারপর নিজে হারমোনিয়াম টাইন্যা লইয়া গানে মশগুল আইয়া যাইতাছেন। হেই সময় কাজী সাহেবের দাড়ি আছিল না। কাজী সাহেব কইছিলেন, আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে, মডার্ন এড়ুকেশনস আর কিছু না লাউয়ের মাচার মতো জিনিস। মাচা না থাকলে লাউগাছ ত বাড়তে পারে না। নজরুল ইসলাম শুইন্যাই বললেন, তোমার কথা ঠিক কাজী, তবে লাউ গাছের চাইতে মাচার ওজন বেশি।
আমি বললাম, স্যার, তখন আপনার বয়স কত? স্যার বললেন, কত আর আইব। আমি হবায় ক্লাস নাইনের ছাত্র। অর্ধেক রাত নজরুলের গান, আবৃত্তি কথাবার্তা শুইন্যা কাটাইয়া দিলাম। সেই রাইতে আর বাসায় যাওনা অয় নাই। চকবাজারে এক আত্মীয়ের লগে কাটাইলাম।
আমি বললাম, আপনার সঙ্গে নজরুল ইসলামের কোনো কথাবার্তা হয়েছে?
না না, স্যার দুবার মাথা নাড়লেন। আমি ক্লাস নাইনের ছাত্র। জিগ্গেস করলাম, এটা ঘটেছিলো কোন সালে।
স্যার একটু থেমে বললেন, উনিশশো সাতাশ সালে।
দীর্ঘদিনের মেলামেশায় এটা আমার জানা হয়ে গিয়েছিলো স্যারকে তার মর্জিমাফিক চলতে দেয়া ভালো। মেজাজ শরিফ একটা ব্যাপার আছে না, এটা স্যারের বেলায় অত্যন্ত সত্য। জানান দিয়ে ঘটা করে প্রশণ করতে বসলে স্যারের মুখ থেকে কিছু বের করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। অনেক আগেই আমাদের চলে আসার কথা। কিন্তু স্যারের কথার মাঝখানে চলে আসতে সঙ্কোচ বোধ করছিলাম। সুযোগ যখন তিনি নিজেই করে দিয়েছেন, আমি তার কাছে আবার মিঃ হ্যারন্ড লাস্কি সম্পর্কে প্রশ্ন জিগ্গেস করতে আরম্ভ করলাম। আমি বললাম, স্যার, আপনি সর্বমোট কতদিন মিঃ লাস্কির সঙ্গে ছিলেন।
স্যার বললেন, আমি তা সরাসরি পিএইচডি-তে ভরতি অইছিলাম। সর্বমোট সাড়ে পাঁচ বছর মিঃ লাঙ্কির সাহচর্য পাইছি।
তিনি মিঃ লাস্কি সম্পর্কে নানা রকম গল্প করলেন। এগুলো তিনি আগেও একাধিকবার বলেছেন। এবার আমি অধিকতর সুনির্দিষ্ট হতে চাইছিলাম। আমি বললাম, স্যার, মিঃ লাস্কির ছাত্র হিসেবে তার কোন বৈশিষ্ট্যটি আপনি প্ৰণিধানযোগ্য মনে করেন?
স্যার এক মিনিটের মতো নীরব থাকলেন। তারপর বললেন, আমি মনে করি মিঃ লাস্কি অন্য মানুষদের এমন সব বিষয়ে চিন্তা করতে প্ররোচিত করবার পারতেন, নর্মালি যেটা তারা করতে অভ্যস্ত নন। এটাই মিঃ লাস্কির সবচাইতে বড় গুণ। স্কলার হিসাবে মিঃ লাস্কি অতি উচ্চশ্রেণীর না অইলেও অপরের চিন্তাভাবনায় ধাক্কা দেঅন খুব কম কথা নয়।
আমি প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করলাম, গ্রামার অব পলিটিক্সের একটি এডিশানে মিসেস লাস্কি একটি প্রফেস লিখেছেন।
স্যার বললেন, মিসেস লাস্কি মিঃ লাস্কির চাইতে বয়সে একটু বড় আছিলেন। উঁচা লম্বাও আছিলেন। মিঃ লাঙ্কি ছিলেন আমার চাইতে একটু উঁচা। কেতাদুরস্ত পোশাক পরতেন। সবসময় সত্য কথা বোধহয় বলতেন না।
আমরা আলোচনার এই পর্যায়ে এসে দেখলাম, স্যারের হাতে সময় নেই, একথাটি সত্যি নয়। অন্যদিনের চাইতেও তিনি বেশি কথাবার্তা বলছেন। সুযোগ যখন পাওয়া গেল, আমরা পুরো সদ্ব্যবহার করতে চাইলাম। আমি বললাম, আদার দ্যান মিঃ লাস্কি হু আর দি স্কলারস ইউ হ্যাভ বিন ইমপ্রেসড?
স্যার হারভার্ডের ম্যাসনের নাম বললেন। গলব্রেথ প্রমুখ পণ্ডিত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করলেন। আমি জিগ্গেস করলাম, হারভার্ডে মিঃ ম্যাসনের কী পজিসন প্ৰেস্টিজ আছিল?
স্যার বললেন, মিঃ ম্যাসন ওয়াজ মাস রেসপেক্টেড পারসন ইন হারভার্ড অ্যান্ড ওয়াজ এ গ্রেট স্কলার। আসলে নামেমাত্র একজন প্রেসিডেন্ট আছিল। মিঃ ম্যাসনই গুরুত্বপূর্ণ ডিসিশনগুলো নিতেন। তার লগে এই দেশেই আমার পরিচয় হইছিল। ড. সান্দেকের লগে তার একটা মিস আন্ডারস্টেডিং অইছিল, আমি তারে এরকমের মেডিয়েট করছিলাম, কইছিলাম, হোয়াই ডোন্ট ইউ ইনভাইট হিম ইন এ ডিনার অ্যান্ড ডিসকাস দ্যা ইস্যু। রেভিনিউ প্রশ্নে আমার একটা মন্তব্য ম্যাসন সাহেবের খুব মনে ধরছে। আমি কইছিলাম ল্যান্ডের রেভিনিউ যা ছিল আগে সরকারের আয়ের প্রধান উৎস এখন সে রেভিনিউ দিয়া সরকার পাঁচ পার্সেন্ট অর্থও আয় করবার পারে না। মিঃ ম্যাসন ওয়াজ মাচ ইম্প্রেসড।
ড. আহমেদ কামাল জিগ্গেস করলেন, হেনরী কিসিঙ্গার তখন হারভার্ডে ছিলেন না?
স্যার বললেন, অবশ্যই ছিলেন। হি ওয়াজ দেন অ্যান অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর।
আমি বললাম, মিঃ কিসিঞ্জারের সঙ্গে আপনার কোনো পরিচয় ছিলো না?
স্যার বললেন, খুব ভালা পরিচয় আছিল। কাজে কর্মে খুব সুবিধার আছিলেন না কিসিঙ্গার। তবে আমার লগে সম্পর্কটা আছিল খুব ভালা। আমারে তিনি কইছিলেন তার সেমিনারে আমাগো এই অঞ্চল থেইক্যা কিছু ছাত্র পাঠাইবার কথা। পশ্চিমারা এই অঞ্চলের (ইস্ট পাকিস্তান) কাউরে এনকারেজ করে না। হের লাইগ্যা কিসিঙ্গার সাব আমারে কইছিলেন আমি যাতে নামগুলা আগে পাঠাইয়া দেই। আমি মৃদু প্রতিবাদ করে বললাম, হেনরি কিসিঞ্জারের ইউ এস ফরেন পলিসি অ্যান্ড দ্যা নিউক্লিয়ার স্টক পাইলস বইটি আমি পড়েছি। পরে হোয়াইট হাউস ইয়ার্স পড়েছি। অ্যাকটিভ পলিটিশিয়ানদের মধ্যে ঐরকম কমপ্রিহেনশন এবং রেঞ্জসম্পন্ন কোনো মানুষের কথা আমি চিন্তাও করতে পারি না। স্যার বললেন, কিসিঙ্গার সাহেবের লেখাপড়া ত আছিল অসাধারণ। চিন্তা করার শক্তিও আছিল, কিন্তু মানুষটা কাজেকর্মে সুবিধার আছিল না। হারভার্ডে কেউ পাত্তা দিত না।
আমি প্রসঙ্গটা একটু ঘুরিয়ে নিলাম। বললাম, স্যার, শেখ সাহেব কিসিঞ্জারকে বাংলাদেশে নিমন্ত্রণ করে এনেছিলেন। আমাদের এখানে একটা গল্প চালু আছে যে কিসিঞ্জার সাব মোট পঁয়তাল্লিশ মিনিট হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কাটিয়েছিলেন। তার মধ্যে পঁচিশ মিনিট আপনার সঙ্গে ব্যয় করেছিলেন। এ নিয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের অনেকে রুষ্ট হয়েছিলেন বলে শুনেছি। ঘটনাটা কতটুকু সত্য?
রাজ্জাক স্যার মিঃ কিসিঞ্জারকে উচ্চারণ করতেন কিসিঙ্গার। তিনি জবাবটা এভাবে দিলেন, আমি ত কিসিঙ্গারের লগে দেখা করবার গেছিলাম। অনেক লোক। কিসিঙ্গারের আগের বউটারে আমি চিনতাম। লম্বা নতুন বিউটারে চিনবার পারছিলাম না। কামাল হোসেন আরও কে কে আছিল মনে পড়ে না। সকলের লগে তার বউরে পরিচয় করাইয়া দিয়া বলছিলেন, মাই স্টুডেন্টস। স্যার বললেন, আমার ত কাপড়াচোপড় অত আছিল না। এই পাজামা পাঞ্জাবি চাদর আর মুখে দাড়ি। কিসিঙ্গারের বউ জিগাইলেন, অলসো ওয়াজ হি ইউর স্টুডেন্ট? কিসিঙ্গার কইলেন, নো নো, হি ওয়াজ মাই কলিগ। এইডাই অইল আসল ঘটনা।