কতটা জমি দরকার – লিও টলস্টয়

চার

নতুন গ্রামে পৌঁছুলে সঙ্গে সঙ্গে পাখমকে সেই গ্রামের সমিতির একজন সভ্য করে নেয়া হল। মাথাপিছু হিসেবে প্রায় একশ’ একর জমি দেয়া হল তাকে। এ ছাড়া গরু-ঘােড়ার খাওয়াবার জন্য আলাদা ঘাসের জমিও পেল কিছু। মনের খুশিতে নতুন ঘরবাড়ি তৈরি করে ফেলল পাধম। কেননা আগে যা ছিল তার চেয়ে দশগুণ বেশি ধনী সে এখন। চাষের জন্য কিংবা গরু ঘােড়া চরাবার জন্য জমির কোনাে অভাব নেই। যত ইচ্ছে গরু-ঘােড়া এখন পুষতে পারে সে।

প্রথম প্রথম পাথমের কাছে সবকিছুই মনে হয়েছিল চমৎকার। পাকা বাড়ি, তকতকে ঝকঝকে ঘর, প্রচুর জমি, ভালাে ভালাে ঘােড়া আর গরু। কিন্তু একটু পা ছড়িয়ে বসবার পরে তার আবার মনে হতে লাগল যে জায়গা বড় কম।

গম চাষের সাধ জাগলেও গম চাষের মতাে প্রচুর জমি তার নেই। গম জন্মায় ঘাসজমি, নতুন জমি কিংবা একবার চাষের পর বছর দু-এক ফেলে-রাখা জমিতে।

প্রথম বছর পাখম তার জমিতে গম বুনে চমৎকার ফসল পেল। পরের বছরও সে গম বুনতে চাইল। কিন্তু তার এত জমি ছিল না যে গতবছরের ফসলের জমি দুবছর ফেলে রেখে নতুন জমিতে ফসল বুনবে। কাজেই আরাে জমি লিজ নিয়ে গম বুনল। গম হল প্রচুর কিন্তু সে জমি বাড়ি থেকে এত দূরে যে ফসল বয়ে আনতে অনেক কষ্ট হল তার।

এরপরও সে নতুন নতুন জমি লিজ নিয়ে তাতে গম বুনে পাঁচবছর কাটিয়ে দিল। ভাগ্য তার খুব ভালাে। প্রত্যেকবার সে প্রচুর ফসল পেল। অনেক অর্থ জমল পাখমের। একবার সে কয়েকজন চাষীকে নিয়ে এক মহাজনের বিশাল জমিতে গম চাষ করল। এদিকে সেই জমি নিয়ে এক মামলায় হেরে গেল মহাজন। ফলে সমস্ত খাটুনিটাই বরবাদ হয়ে গেল। জমিটা নিজের হলে পাখমের এই ক্ষতিটা হত না। সেই থেকে পাখম আরাে জমি কেনার ধান্দা করতে লাগল। এক কৃষকের সঙ্গে একহাজার একর জমির দামদরও প্রায় ঠিক হয়ে এল। এমন সময় এক বিদেশি তার ঘােড়াগুলােকে একটু বিশ্রাম দেবার আশায় এসে উঠল পাখমের বাড়িতে। চা পান করতে করতে বিদেশি লােকটি বলল, ‘অনেক অনেক দূরের বাসকিরদের দেশ থেকে আমি এসেছি। বাসকির হল বেদের জাত—একজায়গায় বেশিদিন থাকে না। সেখানে আমি একহাজার রুবল দিয়ে দশহাজার একর জমি কিনেছি।’

কৌতুহলী হয়ে পাখম তাকে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করল। লােকটি বলল, তােমাকে শুধু ওদের সর্দারের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে। তা হলেই তােমাকে আর পায় কে! আমি তাে কিছু কাপড়-চোপড়, কার্পেট আর একবাক্স চা মিলিয়ে শতখানেক রুবল উড়িয়েছি, কিছু ভদকা খাইয়েছি। তাতেই ওরা খুশি হয়ে একরপ্রতি জমি মাত্র আটপয়সায় কোপেকে দিয়ে দিয়েছে।

বিদেশি লােকটি তার দলিলপত্র দেখিয়ে আবার বলল, ‘জমিগুলাে সব নদীর ধারে। চারদিক খােলা। এর আগে কেউ কোনােদিন সে জমিতে চাষ করেনি। আর তাছাড়া সেখানকার মানুষগুলাে একেবারে ভেড়ার মতাে সরল। আপনি অনায়াসে যেকোনাে জিনিশ তাদের কাছে থেকে বাগিয়ে নিতে পারবেন।’

পাখম ভাবল, সেখানে গিয়ে আমি যদি সহজেই জমিদার হয়ে উঠতে পারি, তাহলে এখানে জমি কিনব কেন?

পোস্টটি শেয়ার করুন