আদুভাই – আবুল মনসুর আহমদ

চার

আমি সেবার বিএ পরীক্ষা দেব। খুব মন দিয়ে পড়ছিলাম। হঠাৎ লাল লেফাফার এক পত্র পেলাম। কারো বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র হবে মনে করে খুললাম। ঝরঝরে তকতকে সোনালি হরফে ছাপা পত্র। পত্ৰলেখক আদুভাই। তিনি লিখেছেন : তিনি সেবার ক্লাস সেভেন থেকে ক্লাস এইটে প্রমোশন পেয়েছেন বলে বন্ধুবান্ধবদের জন্য কিছু ডালভাতের ব্যবস্থা করেছেন। 

দেখলাম, তারিখ অনেক আগেই চলে গিয়েছে। বাড়ি ঘুরে এসেছে বলে পত্র দেরিতে পেয়েছি। ছাপচিঠির সঙ্গে হাতের লেখা একটি পত্র। আদুভাইর পুত্র লিখেছে : বাবার খুব অসুখ, আপনাকে দেখবেন তার শেষ সাধ। 

পড়াশোনা ফেলে ছুটে গেলাম আদুভাইকে দেখতে। এই চারবছর তাঁর কোনো খবর নিইনি বলে লজ্জা-অনুতাপে ছোট হয়ে যাচ্ছিলাম। 

ছেলে কেঁদে বলল : বাবা মারা গিয়েছেন। প্রমোশনের জন্য তিনি এবার দিনরাত এমন পড়াশোনা শুরু করেছিলেন যে, শয্যা নিলেন তবু পড়া ছাড়লেন না। আমরা সবাই তার জীবন সম্বন্ধে ভয় পেলাম । পাড়াসুদ্ধ লোক গিয়ে হেডমাস্টারকে ধরায় তিনি স্বয়ং এসে বাবাকে প্রমোশনের আশ্বাস দিলেন। বাবা অসুখ নিয়েই পালকি চড়ে স্কুলে গিয়ে শুয়ে-শুয়ে পরীক্ষা দিলেন। আগের কথামতো তাকে প্রমোশন দেওয়া হল। তিনি তাঁর ‘প্রমোশন উৎসব উদযাপন করবার জন্য আমাকে হুকুম দিলেন। কাকে-কাকে নিমন্ত্রণ করতে হবে, তার লিস্টও তিনি নিজহাতে করে দিলেন। কিন্তু সেই উৎসবে যারা যোগ দিতে এলেন, তাঁরা সবাই তার জানাজা পড়ে বাড়ি ফিরলেন। 

আমি চোখের পানি মুছে কবরের কাছে যেতে চাইলাম। 

ছেলে আমাকে গোরস্তানে নিয়ে গেল। দেখলাম, আদুভাইয়ের কবরে খোদাই-করা মার্বেলপাথরের ট্যাবলেটে লেখা রয়েছে : 

Here sleeps Adu Mia who was promoted from Class VII to Class VIII.

ছেলে বলল : বাবার শেষ ইচ্ছামতোই ও-ব্যবস্থা করা হয়েছে।


পোস্টটি শেয়ার করুন