দৈত্য হল খেলার সাথী
প্রথম দৃশ্য
[মস্ত বড় একটা সুন্দর বাগান। ফুলে-ফলে ভরে আছে। গাছে গাছে অনেক পাখি গান করছে। ছেলেমেয়েরা বাগানে খেলায় মেতে আছে। কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছে আর কেউ বা পাখির গান শুনছে।।
ছোটন : ইশ্, কত কত ফুল ফুটেছে। কী সুন্দর। দেখেছ টুকুন?
টুকুন : হুঁ আমি এখন পাখির গান শুনছি। পাখি, তোমার নাম কী?
বুলবুলি : আমার নাম বুলবুলি। আমার গান তোমার ভাল লাগে?
টুকুন : হ্যাঁ, খু-ব ভাল লাগে।
(ছোটন এগিয়ে যায়। দেখে, ফুলের ওপর একটা ভারি সুন্দর প্রজাপতি বসে আছে।)
ছোটন : ও ভাই, প্রজাপতি, কী সুন্দর তুমি! মজা করে ফুলের মধু খাচ্ছ বুঝি?
প্রজাপতি : জান, আমার আজ একটুও ভাল লাগছে না।
টুকুন : কেন ভাই, প্রজাপতি?
প্রজাপতি : শোন তবে, চুপি চুপি বলি। এ বাগানের মালিক হচ্ছে এক মস্ত বড় দৈত্য। ভয়ংকর সে দৈত্য। আমার যা ভয় করে। ঐ যে বিরাট প্রাসাদে সে থাকে। সে যখন আসে তখন এ বাগানে ফুল ফোটে না। পাখি গান করে না।
ছোটন : দৈত্য তো এখন নেই। তা হলে তোমার মন খারাপ কেন?
প্রজাপতি : কাল রাতে সে প্রাসাদে ফিরে এসেছে। প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে বাগানে এলেই আর ফুলেরা থাকবে না। ফুল না থাকলে আমি কী ভাবে থাকি,বল? (হঠাৎ বুলবুলিটা উড়ে গেল। উড়ে গেল আর সব পাখিও। দেখতে দেখতে ফুলগুলো কেমন চুপসে গেল। গাছগুলো সব চুপচাপ। ডালপালাও নড়ে না। দেখাগেল, দৈত্যটা তার প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে বাগানের দিকে আসছে। সে চিৎকার করে বলছে)
দৈত্য : এই, কে রে ওখানে? সব পাজি ছেলেমেয়ে! আমার বাগানে কেন খেলতে এসেছ? আমি এখানে কাউকে খেলতে দেব না। এটা আমার
বাগান। যাও, তোমরা সব চলে যাও।
(চীৎকার করে মালীকে ডাকল)
মালী : (ছুটতে ছুটতে) হুজুর
দৈত্য : বাগানের চারদিকে খুব উঁচু করে দেয়াল তুলে দাও। আর দেয়ালে বড় বড় করে লিখে দাও:
“আজ থেকে হল মানা
এ বাগানে কেউ ঢুকবে না।”
দ্বিতীয় দৃশ্য
(শূন্য বাগান। কেউ কোথাও নেই। ছেলেমেয়েরা বাগানের চারপাশে ঘোরাফেরা করে।)
ছোটন : দৈত্যটা ভারি পাজি। আমরা এখন খেলব কোথায়?
টুকুন : কত ফুল আর পাখি ছিল বাগানে।
মিঠুন : কিন্তু এখন আর বাগানে ফুল নেই। পাখিও নেই।
ছোটন : কেন ভাই? ফুল পাখি নেই কেন?
মিঠুন : দৈত্যটা যে দারুণ হিংসুটে। সে কাউকে ভালবাসে না। তাই মনের দুঃখে ফুল ফোটে না, পাখি গান গায় না। প্রজাপতিরাও আর আসে না।
টুকুন : পথে পথে ঘুরে বেড়াতে আমার ভাল লাগে না। আমি বাগানে খেলব।
ছোটন : বাগানে যে ভয়ংকর দৈত্য আছে। শিশুদের দেখলেই তেড়ে আসে। বাগানে খেলবে কী করে?
টুকুন : তাহলে এখন কী করব আমরা?
মিঠুন : আমরা আর মজা করে খেলব না। হাসব না, গান করব না। সবাই চুপচাপ বসে থাকব।
তৃতীয় দৃশ্য
(বসন্ত এসেছে। বাগানে ফুল ফুটেছে। শুধু দৈত্যের বাগানে ফুল ফোটে নি। পাখিরাও আসে নি। দৈত্যের মেজাজ খুব খারাপ। এক দিন বাগানের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ সে চিৎকার করে ডেকে ওঠে।)
দৈত্য : মালী! মালী!
মালী : (ছুটতে ছুটতে) হুজুর, আমাকে ডেকেছেন?
দৈত্য : কী আশ্চর্য! আজ বাগানের ঐ কোনটিতে ফুল ফুটেছে দেখছি। পাখিরাও গানের সুর তুলেছে।
মালী : ছেলেমেয়েরা বাগানে খেলায় মেতেছে।
দৈত্য : কেমন করে ঢুকল ওরা?
মালী : দেয়ালের ঐ কোণে ছোট্ট একটা ফুটো আছে। দুষ্টু ছেলেমেয়েরা এই ফুটো দিয়েই ঢুকে পড়েছে।
দৈত্য : (চিৎকার করে) এক্ষুণি তাড়িয়ে দাও ওদের।
(মালী লাঠি হাতে তেড়ে আসে। ছেলেমেয়েরা ছুটে পালিয়ে যায়। একটি ছেলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দেয়াল পার হয়। সে দেয়ালের বাইরে বসে কাঁদতে থাকে। সে ছিল খোঁড়া আর খুব ছোট।)
দৈত্য : (বাগানে ঢুকতে ঢুকতে) এটা আমার বাগান। আমি একলাই এখানে ঘুরে বেড়াব। কিন্তু (চারপাশে তাকিয়ে) ফুলগুলো ঝরে পড়ছে কেন? প্রজাপতিগুলো উড়ছে না কেন? পাখিরা পালিয়ে গেল কোথায়?
মালী : দুষ্টু ছেলেমেয়েগুলো জাদু জানে। ওরা যখন আসে তখন ফুল ফোটে, পাখি গায়, প্রজাপতি ওড়ে
দৈত্য : বুঝেছি, ঠিক বুঝেছি। আমি ওদের বাগানে আসতে দেব। ভেঙে দেব ঐ দেয়াল।
(মস্তবড় হাতুড়ি দিয়ে দেয়াল ভাঙতে থাকে। দেয়ালের বাইরে বসে খোঁড়া ছেলেটি তখনও কাঁদছিল। দৈত্য তাকে দেখতে পেয়ে বলে ওঠে…..)
দৈত্য : কাঁদছ কেন, ছোট্ট খোকা? এস, বাগানে এস। আজ থেকে এ বাগান তোমাদেরই। (বলতে বলতে হাতে তুলে ছেলেটিকে একটা গাছের
ডালে বসিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে আর সব ছেলেমেয়ে হুড়মুড় করে বাগানে ঢুকে পড়ে।)
মালী : (চোখ বড় বড় করে চারদিকে তাকিয়ে) কী আশ্চর্য। দখিনা হাওয়া বইছে। কত কত ফুল ফুটেছে! পাখিরাও আবার এসেছে।
দৈত্য : (ছেলেমেয়েদের কাছে ডেকে) আজ থেকে তোমরা হলে আমার খেলার সাথী, আমার বন্ধু। এ বাগান তোমাদের। এখানে আমরা এক সাথে খেলব, গান করব………।






