সাত ভাই চম্পা – দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার

রাজা আসিয়া ফুল তুলিতে গেলেন, অমনি পারুল ফুল চাঁপা-ফুলদিগকে ডাকিয়া বলিল,-

“সাত ভাই চম্পা জাগ রে!”

চাঁপারা উত্তর দিল,-

“কেন বোন্ পারুল ডাক রে?”

পারুল বলিল,-

“রাজা আপনি এসেছেন,
ফুল দিবে কি না দিবে?

চাঁপারা বলিল,-

“না দিব, না দিব ফুল, উঠিব শতেক দূর,
আগে আসুক রাজার বড়োরানি তবে দিব ফুল।”

বলিয়া, চাঁপাফুলেরা আরও উঁচুতে উঠিল।

রাজা বড়োরানিকে ডাকাইলেন। বড়োরানি মল বাজাইতে বাজাইতে আসিয়া ফুল তুলিয়া গেল। চাঁপাফুলেরা বলিল,-

“না দিব, না দিব ফুল, উঠিব শতেক দূর,
আগে আসুক রাজার মেজরানি, তবে দিব ফুল।”

তাহার পর মেজোরানি আসিলেন, সেজোরানি আসিলেন, নোয়া রানি আসিলেন, কনেরানি আসিলেন, কেহই ফুল পাইলেন না। ফুলেরা গিয়া আকাশে তারার মত ফুটিয়া রহিল।

রাজা গালে হাত দিয়া মাটিতে বসিয়া পড়িলেন।

শেষে দুয়োরানি আসিলেন; তখন ফুলেরা বলিল,-

“না দিব, না দিব ফুল, উঠিব শতেক দূরে,
যদি আসে রাজার ঘুঁটে-কুড়ানী দাসী,
তবে দিব ফুল।”

তখন খোঁজ-খোঁজ পড়িয়া গেল। রাজা চৌদোলা পাঠাইয়া দিলেন, পাইক বেহারারা চৌদোলা লইয়া মাঠে গিয়া ঘুটে-কুড়ানী দাসী ছোটরানিকে লইয়া আসিল।

ছোটরানির হাতে পায়ে গোবর, পরনে ছেড়া কাপড়, তাই লইয়া তিনি ফুল তুলিতে গেলেন। অমনি সুরসুর করিয়া চাঁপারা আকাশ হইতে নামিয়া আসিল, পারুল ফুলটি গিয়া তাদের সঙ্গে মিশিল; ফুলের মধ্য হইতে সুন্দর সুন্দর চাঁদের মত সাত রাজপুত্র ও এক রাজকন্যা “মা মা” বলিয়া ডাকিয়া, ঝুপ্ ঝুপ্ করিয়া ঘুঁটে-কুড়ানী দাসী ছোটরানির কোলে-কাঁখে ঝাঁপাইয়া পড়িল।

সকলে অবাক্! রাজার চোখ দিয়া ঝরঝর করিয়া জল গড়াইয়া গেল। বড়োরানিরা ভয়ে কাঁপিতে লাগিল।

রাজা তখনি বড়োরানিদিগে হেঁটে কাঁটা উপরে কাঁটা দিয়া পুঁতিয়া ফেলিতে আজ্ঞা দিয়া, সাত-রাজপুত্র, পারুল, মেয়ে আর ছোটরানিকে লইয়া রাজপুরীতে গেলেন।

রাজপুরীতে জয়ডঙ্কা বাজিয়া উঠিল।


পোস্টটি শেয়ার করুন