কাজেই পরিচয়
কার শক্তি বেশি?
সূর্যের না বাতাসের ?
সূর্য বলে, আমার।
বাতাস বলে, না, আমার।
তর্ক বাধে।
সূর্য বলে, আমি সকলের চেয়ে বড়। গায়ে অনেক শক্তি আমার। আমার মুখ দেখে রাতের আঁধার পালায়। ভোরের আলো ফোটে। গাছে গাছে পাখি ডাকে। ফুলকুঁড়িরা চোখ মেলে চায়। আলোয় ঝলমল করে চারদিক। চাষীর ব্যস্ততা বাড়ে। মাঝি শক্ত হাতে হাল ধরে। সকাল গড়িয়ে দুপুর আসে। আবার কখনও গনগনে রোদে তেতে ওঠে মাটি। মাটির বুকে চিড় ধরে। পথ চলতে গিয়ে ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ে দূরের পথিক। তৃষ্ণায় তার গলা শুকিয়ে আসে। সন্ধ্যা নামতেই আমি চলে গেলে অন্ধকারে ঢেকে যায় গোটা পৃথিবী।
বাতাস বলে, আমি ছোট কিসে? শক্তিতে আমার জুড়ি নেই। আমি বাঁচিয়ে রাখি মানুষকে। বাঁচিয়ে রাখি আর সব প্রাণীকেও। গাছপালাও আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারে না। আমি গাছের শাখায় দোল দিই। চারদিকে ফুলের মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে দিই। আমি পথিকের পথচলার ক্লান্তি দূর করি। আর যখন আমি খেপে উঠি তখন আমাকে পায় কে? হাতের কাছে যা কিছু পাই লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যাই। গাছের ডাল ভাঙে। ঘরের চালা ওড়ে। মুখ থুবড়ে পড়ে বুড়ো বট। ফুঁসে ওঠে সাগর, নদী। বিরান হয় লোকালয় আর খেতের ফসল।
কথায় কথা বাড়ে। কেউ দমবার পাত্র নয়। শক্তির বড়াই চলল অনেকক্ষণ ধরে।
এমন সময় সেই পথ ধরে চলছিল একটি লোক। গায়ে চাদর পরে আছে লোকটি। লোকটিকে দেখে গম্ভীর গলায় সূর্য বাতাসকে বলল, তর্ক করে কী লাভ বল। তার চেয়ে পরীক্ষা হোক – কার শক্তি বেশি ?
ঠোঁট উলটিয়ে বাতাস বলল, পরীক্ষা? সে আবার এমন কী ? জিত হবে আমারই।
ঠিক হল, লোকটির গায়ের চাদরটি খুলে নিতে হবে। যে এ কাজটি করতে পারবে সে জয়ী হবে। যেই কথা সেই কাজ।
প্রথমে বাতাস তার কাজ শুরু করল। সে এক তুমুল কাণ্ড! বাতাসের তোড়ে ঘরবাড়ি থরথর করে কেঁপে উঠল। বিকট শব্দ করে বাজ পড়ল। ঠাণ্ডা হাওয়ায় কাঁপুনি ধরে আর কি! লোকটি চাদরটিকে তার গায়ে ভাল করে জড়াল। তারপর প্রাণপণ ছুটল। বাতাস যত জোরে বইতে থাকল সে তত জোরে চাদরটিকে গায়ে জড়িয়ে নিল।
বাতাস তার যতটুকু সাধ্য ছিল চেষ্টা করল কিন্তু কাজ হল না। লোকটি তার গা থেকে চাদর খুলল না।
এবার সূর্যের পালা।
সূর্য তাপ ছড়াতে শুরু করল। দেখতে দেখতে গনগনে রোদে আকাশ ভরে গেল।
রোদের আঁচে পথিকের গা পুড়ে যায় আর কি ! পিপাসায় বুঝি বুক ফাটে ! দরদর করে ঘামতে শুরু করল সে। তারপর একটানে গা থেকে খুলে ফেলল চাদরটি ।
অবাক দৃষ্টিতে সব কাণ্ড দেখল বাতাস। ভারি লজ্জা হল তার। মিছামিছি তর্ক করেছে সে। অকারণে বড়াই করেছে।
কথায় নয়, কাজেই শক্তির পরিচয় দিতে হয়।