সবাই মিলে, সবার পাশে – আমাদের মির্জানগর

COVID-19 বা করোনা ভাইরাস জনিত সৃষ্ঠ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার ১নং মির্জানগর ইউনিয়নের কর্মহীন দরিদ্র মানুষদের সহযোগীতা প্রদানের লক্ষে “আমাদের মির্জানগর” ফেসবুক গ্রুপ একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমাদের স্লোগান ছিল  “সবাই মিলে, সবার পাশে”। আমাদের প্রথম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল- ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে একটা তহবিল গঠন করে, ইউনিয়নের যেসকল মানুষ এই লকডাউন পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকটে রয়েছে কিন্তু সরকারী / বেসরকারী উদ্যোগে বিতরণকৃত সহযোগিতা তাদের নিকট এখনও পৌঁছায়নি বা পর্যাপ্ত নয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের পাশে দাড়ানো।

সেই উদ্দেশ্যে আমরা ৩রা মে, ২০২০ তারিখ দুপুর ১টার সময় অর্থ সংগ্রহের ঘোষনা দিয়ে গ্রুপে পোস্ট করার পর প্রথমদিন থেকেই সকলের সাড়া পেতে শুরু করি। দ্বিতীয়দিন থেকে বিষয়টি সবার মধ্যে রীতিমতো উৎসবের আমেজ ধারন করে। এভাবে সাত তারিখ পর্যন্ত আমাদের কালেকশন গিয়ে দাড়ায় প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার মতো। প্রথমদিন বাদ দিয়ে হিসাব করলে গড়ে প্রতিদিন ৪০ হাজার টাকার মতো কালেকশন হয়।

প্রথমে আমাদের ধারনা ছিল আমরা হয়তো এক লক্ষ টাকা বা তার আশেপাশে একটা ফান্ড কালেক্ট করতে পারব, কিন্তু সবাই যেভাবে স্বপ্রণোদিতভাবে আমাদের বিশ্বাস করে এগিয়ে এসেছে তা কল্পনাতীত। বিতরণ ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাপনা যেন ভেঙ্গে না পরে সেই আশংকা থেকে আমরা ৭ তারিখে ঘোষনা দেই ৮ তারিখ রাত ১১.৫৯মি. এ কালেকশন বন্ধ করে দেওয়ার। ঘোষনা দেওয়ার পরপরই পরবর্তী মাত্র ২৪ ঘন্টায় আমাদের কালেকশনের পরিমাণ দাড়ায়- ১ লক্ষ ২২ হাজার টাকা। বিষয়টি সবার মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী – পেশার মানুষ। চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী, প্রবাসী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, ছাত্রসহ সকল পর্যায় থেকে আমরা সাড়া পাই। এমনকি এলাকার জনপ্রতিনিধিগণও আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত তহবিল হতে অনুদান প্রদান করেছেন। স্বয়ং ইউনিয়নের সুযোগ্য চেয়ারম্যান জনাব নুরুজ্জামান ভুট্টু নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আমাদের অনুদান প্রদানের পাশাপাশি বিতরণকাজে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। এই অনুদান সংগ্রহ কার্যক্রমে অত্র ইউনিয়নের প্রায় ২০০ জন মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। আমাদের দৈনন্দিন অনুদান সংগ্রহ নিম্নরূপ-

  • ১ম দিন (৩ মে, ২০২০)      = ৬,০৮০/-
  • ২য় দিন (৪ মে, ২০২০)       = ২৮,৪৩০/-
  • ৩য় দিন (৫ মে, ২০২০)      = ৫০,৫৮০/-
  • ৪র্থ দিন (৬ মে, ২০২০)      = ৫২,৫৫৯/-
  • ৫ম দিন (৭ মে, ২০২০)      = ৪২,৫৯১/-
  • ৬ষ্ঠ দিন (৮ মে, ২০২০)      = ১,২২,১২১/-
  • মোট কালেকশন              = ৩,০২,৩৬১/-

ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে আমরা আমাদের সেচ্ছাসেবকদের দিয়ে তালিকা সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই করে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের তালিকা তৈরী করেছি। আমাদের গঠিত তহবিল হতে আমরা ৫০৩টি পরিবারকে সহযোগীতা পৌঁছে দিয়েছি… আলহামদুলিল্লাহ। প্রায় ৩০ জনের অধিক সেচ্ছাসেবকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা মাত্র দুই দিনে আমাদের প্যাকেজিং কাজ সম্পন্ন করেছি। সেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি আমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন এলাকার সচেতন নগরিকগণ। গত ৩ দিনে (১২-১৪ মে, ২০২০) তারিখে ইউনিয়নের সবক’টি ওয়ার্ডে আমাদের উপহার সামগ্রী বিতরণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আমাদের উপহার সামগ্রী বিতরণে কোন গ্রহণকারীর ছবি তোলা বা প্রকাশের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি। যেন কোন ভুক্তভোগী সামাজিকভাবে ছোট না হন, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা সন্ধ্যার পর সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি।

রমজান ও পরবর্তী ঈদ বিবেচনায় আমাদের প্রতিটি উপহারের প্যাকেজে রয়েছে-

  • চাল – ৫ কেজি
  • ডাল- ১ কেজি
  • সয়াবিন তেল – ১ লিটার
  • ছোলা – ১ কেজি
  • মুড়ি – ০.৫ কেজি
  • সেমাই- ২ প্যাকেট
  • চিনি- ১ কেজি

সবার সহযোগিতা পেলে অদূর ভবিষ্যতেও আমরা এভাবে ইউনিয়নের বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাড়াতে পারব বলে আমাদের বিশ্বাস। ধন্যবাদ জানাই সকল অনুদান প্রদানকারী ও সেচ্ছাসেবকদের যাদের সহযোগিতায় আমরা এই কর্মযজ্ঞ সফল করতে পেরেছি।

 

এডমিন প্যানেল-

 

পোস্টটি শেয়ার করুন