মার্চেন্ট অব ভেনিস – উইলিয়াম শেক্সপিয়ার

বিচারক আর কোনো কথা বললেন না। অ্যান্টনিও বলল, ‘ধর্মাবতার, আপনি আর আমার জন্য অপদস্থ হবেন না। আমি প্রস্ত্তত।’

খুশিতে শাইলকের চোখ চকচক করে উঠল। তার প্রাপ্য এক পাউন্ড মাংস পাবার জন্য সে জুতোর তলায় ছুরি শান দিতে লাগল।

ঠিক এমন সময় এক পেয়াদা একখানা চিঠি এনে বিচারকের কাছে দিল। তাতে লেখা অ্যান্টনিওর এক বন্ধু একজন উকিল পাঠিয়েছেন। তিনি বাইরে অপেক্ষা করছেন; অ্যান্টনিওর পক্ষে কথা বলতে চান তিনি।

বিচারকের অনুমতি পেয়ে এক তরুণ উকিল আদালতে প্রবেশ করলেন। কিন্তু উকিল সব শুনে মাংস কেটে নেবার পক্ষেই সমর্থন দিলেন। শুনে বাসানিও স্থান কাল পাত্র ভুলে আদালতের মধ্যেই কাঁদতে শুরু করল।

তার জন্যেই তো আজ তার অকৃত্রিম বন্ধু অ্যান্টনিওর এই অবস্থা।

উকিল বললেন, মানবতার খাতিরে আইনকে বিসর্জন দেয়া আমদের উচিত নয়। আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা আবশ্যক। এবার আপনি মাংস কেটে নিন। আর অ্যান্টনিও, আপনিও শর্ত পালনের জন্য প্রস্ত্তত হন।

অ্যান্টনিও আস্তে বললেন, আমি প্রস্ত্তত আছি।

শাইলক মহাখুশি। তরুণ উকিলের আইনের প্রতি বিচক্ষণতা, আনুগত্য ইত্যাদির ভূয়সী প্রশংসা করে ছুরি উঁচু করে অ্যান্টনিওর দিকে সে এগিয়ে গেল। তরুণ উকিল বলল, অবশ্যই, আপনাকে ধন্যবাদ শাইলক। আপনিও আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল জেনে সুখি হলাম। কারণ দশগুণ টাকা অ্যান্টনিও পরিশোধ করতে চাইলেও আপনি তা গ্রহণ করেননি।

‘আপনি ঠিকই বলেছেন উকিল সাহেব।’ দেঁতো হাসি হাসতে লাগল শাইলক।

অ্যান্টনিওর পক্ষের উকিল বললেন, শর্তানুযায়ী আপনি এক পাউন্ড মাংস পাবেন-অবশ্যই সেটা পাবেন, কিন্তু দেখবেন যেন মাংস কেটে নেবার সময় তার কম বা বেশি না হয়। দ্বিতীয়ত সঙ্গে একবিন্দু রক্তও যেন না  ঝরে। কারণ রক্তের কথা দলিলে লেখা নেই।

বজ্রাহত পথিকের মতো দাঁড়িয়ে রইল শাইলক। এ তো সাংঘাতিক প্যাঁচ, রক্ত না ঝরলে মাংস নেবে কী করে। আর এক পাউন্ড মাংস মেপে কাটা কী সম্ভব?

শাইলক থরথর করে কাঁপছে আর তরুণ উকিলের মুখে মৃদু মৃদু হাসি। উপায়ন্তর না দেখে শাইলক তাড়াতাড়ি বলল, আমি মাংস চাই না, আমার আসল টাকাটা চাই।

বিচারক এবার কথা বললেন, অসম্ভব। আপনার বিরুদ্ধে এবার চার্জ হবে। একজন নাগরিককে হত্যার উদ্দেশ্যে আপনি বন্ধপরিকর ছিলেন। এর শাস্তিস্বরূপ আপনার অর্ধেক সম্পত্তি অ্যান্টনিও পাবে-বাকি অর্ধেক সরকারি কোষাগারে জমা হবে।

অ্যান্টনিও চমকে উঠল। বলল, না, ওর একটা কানাকড়িও আমি চাই না। আমার বন্ধুপুত্র লরেঞ্জো ওর মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। ও যদি স্বীকৃতি দেয় তবে তাদেরকে আমার অংশ আমি দান করে দিলাম।

অগত্যা শাইলক তাতেই রাজি হলো।

বিচারকার্য শেষ হলো। অ্যান্টনিও তরুণ উকিলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাবার জন্য এগিয়ে গেলেন। পারিশ্রমিকের কথা উঠলে তিনি বললেন কোনো পারিশ্রমিক তিনি নেবেন না, তবে যদি একান্তই তিনি দিতে চান তবে তার বন্ধু বাসানিওর আংটিটা উপহারস্বরূপ দিতে পারেন।

আংটিটা আর এমন কী মূল্যবান! তবু বাসানিও তা দিতে ইতস্তত করছিল। কারণ আংটিটা ছিল নববধূ পোর্শিয়ার তরফের উপহার এবং এটা হস্তান্তর নিষিদ্ধ ছিল। তবু বন্ধুর ব্যাপারে সে কি না দিয়ে পারে!

এর পরের ঘটনা অতি সংক্ষিপ্ত। বাসানিও ফিরে এলেন বেলমেন্ট শহরে পোর্শিয়ার কাছে। বাসানিওর হাতে আংটি না দেখে বিস্মিত হয়ে বাসানিওকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার হাতে আমার দেওয়া উপহারটা কই

বাসানিও সব খুলে বলল। তারপর হাসিমুখে পোর্শিয়া একটা আংটি এনে তার হাতে পরিয়ে দিল। কিন্তু আংটিটা দেখে চমকাবার পালা ছিল অ্যান্টনিওর। কারণ এ সেই আংটি যেটা সে তরুণ উকিলকে উপহার দিয়ে এসেছিল।

সে জানতে চাইল, ‘তুমি এটা কোথায় পেলে?’

তখন একটা উচ্চহাসির রোল পড়ে গেল।


পোস্টটি শেয়ার করুন