নবান্ন – যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
নবান্ন
– যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
এসেছ বন্ধু? তোমার কথাই জাগছিল ভাই প্রাণে,-
কাল রাতে মোর মই প’ড়ে গেছে ক্ষেতভরা পাকা ধানে।
ধান্যের ঘ্রাণে ভরা অঘ্রানে শুভ নবান্ন আজ,
পাড়ায় পাড়ায় উঠে উৎসব, বন্ধ মাঠের কাজ।
লেপিয়া আঙিনা দ্যায় আল্পনা ভরা মরাইএর পাশে;
লক্ষ্মী বোধ হয় বাণিজ্য ত্যাজি’ এবার নিবসে চাষে।
এমন বছরে রাতারাতি মোর পাকা ধানে পড়ে মই!
দাওয়ার খুঁটিতে ঠেস্ দিয়ে বসো,- সে দুখের কথা কই;
বোশেখ, জ্যষ্টি, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্দর, আশ্বিন,-
আশা-আতঙ্কে খেয়াল ছিল না কোথা দিয়ে কাটে দিন।
দুর্যোগে সবে বালির বাঁধনে বাঁধিনু বন্যাধারা,
বুকের রক্ত জল কোরে কভু সেচিনু পাণ্ডু চারা।
কার্তিকে দেখি চারিদিকে,- একি! এবার ত নহে ফাঁকি!
পাঁচরঙা ধানে ছক্-কাটা মাঠ জুড়ায় চাষার আঁখি।
অঘ্রানে থাকে থাকে
কাটিয়া তোলায় খামারে গোলায় যাহার যেমন পাকে।
আমি রোজ ভাবি- ফসলটা নাবি, আরও ক’টা দিন যাক্,
ভরা অঘ্রানে ঘটেনা- ত কোনো দৈব দুর্বিপাক।
মরাই-সারাই শেষ কোরে, সবে খামারে দিইছি হাত,
কাল্কে হঠাৎ,
-বন্ধু, দোহাই, তুলোনাকো হাই, হইনু অপ্রগল্ভ,-
ক্ষমা করো সখা, বন্ধ করিনু তুচ্ছ ধানের গল্প।