গোঁফ চুরি – সুকুমার রায়
গোঁফ চুরি
– সুকুমার রায়
হেড আফিসের বড় বাবু লোকটি বড়ই শান্ত,
তার যে এমন মাথার ব্যামো কেউ কখনও জান্ত ?
দিব্যি ছিলেন খোস্মেজাজে চেয়ারখানি চেপে,
একলা ব’সে ঝিমঝিমিয়ে হঠাৎ গেলেন ক্ষেপে !
আঁৎকে উঠে হাত পা ছুঁড়ে চোখটি ক’রে গোল
হঠাৎ বলেন, “গেলুম গেলুম, আমায় ধ’রে তোল” ।
তাই শুনে কেউ বদ্যি ডাকে, কেউ বা হাঁকে পুলিশ,
কেউবা বলে, “কামড়ে দেবে সাবধানেতে তুলিস্।”
ব্যস্ত সবাই এদিক ওদিক কর্ছে ঘোরাঘুরি-
বাবু হাঁকেন, “ওরে আমার গোঁফ গিয়েছে চুরি” !
গোঁফ হারান ! আজব কথা ! তাও কি হয় সত্যি ?
গোঁফ জোড়া ত তেমনি আছে, কমেনি এক রত্তি ।
সবাই তারে বুঝিয়ে বলে, সাম্নে ধরে আয়না,
মোটেও গোঁফ হয়নি চুরি, কক্ষনো তা হয় না ।
রেগে আগুন তেলে বেগুন, তেড়ে বলেন তিনি,
“কারো কথার ধার ধারিনে, সব ব্যাটাকেই চিনি ।
“নোংরা ছাঁটা খ্যাংরা ঝাঁটা বিচ্ছিরি আর ময়না,
এমন গোফ ত রাখত জানি শ্যামবাবুদের গয়লা।
“এ গোঁফ যদি আমার বলিস করব তোদের জবাই”-
এই না ব’লে জরিমানা কল্লেন তিনি সবায় ।
ভীষণ রেগে বিষম খেয়ে দিলেন লিখে খাতায়-
“কাউকে বেশি লাই দিতে নেই, সবাই চড়ে মাথায় ।
“আফিসের এই বাঁদরগুলো, মাথায় খালি গোবর
“গোঁফ জোড়া যে কোথায় গেল কেউ রাখে না খবর ।
“ইচ্ছে করে এই ব্যাটাদের গোঁফ ধ’রে খুব নাচি,
“মুখ্যুগুলোর মুণ্ডু ধ’রে কোদাল দিয়ে চাঁচি ।
“গোঁফকে বলে তোমার আমার- গোঁফ কি কারও কেনা ?
“গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা ।”